ডেইলি জেলা পোস্ট নিজস্ব প্রতিবেদক
রঙিন ছাতা টানিয়ে সারি সারি দোকান। দেখে বাইরে থেকে মনে হবে কম্পিউটার-ফটোকপির দোকান। কিন্তু ভেতরে ব্যবসা ভিন্ন। প্রকাশ্যে চলছে পাসপোর্ট নিয়ে জাল-জালিয়াতির কারবার। ভুয়া সিল প্যাড ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে যাবতীয় নকল কাগজপত্র। হাত বাড়ালেই মিলছে সব। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সামনে এসব দোকান ঘর ঘিরেই তৎপর পাসপোর্ট দালাল চক্রের সদস্যরা। সরেজমিন আজ এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
দেখা যায়, বেশিরভাগ পাসপোর্ট প্রত্যাশী ই-পাসপোর্টের ফরম পূরণ করতে গিয়ে দালালের ফাঁদে পড়ছেন। ফরম পূরণ শেষ হলেই দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট করার অফার দেয় দালালরা। পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য টাকার অংক ভিন্ন। যেমন: সিরিয়াল ছাড়া আবেদন জমা করতে ৫ থেকে ১৫ হাজার, পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট পেতে ২০ হাজার, নামের বানান সংশোধনে ৩০ হাজার এবং জন্ম তারিখ সংশোধনে ৫০ হাজার থেকে লাখ পর্যন্ত টাকা চাওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাসপোর্ট দালাল ডেইলী জেলা পোষ্টকে বলেন, ‘অফিসে তাদের লোক আছে। পাসপোর্ট সংক্রান্ত সমস্যা শুনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তারা ফোন দেন। সবুজ সংকেত পাওয়ার পর তারা কাজ হাতে নেন।’ কয়েকজন পাসপোর্ট দালাল আরও জানান, পাসপোর্ট দালালির কাজে তাদের প্রত্যেকের গড়ে দৈনিক আয় হয় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া পাসপোর্টের ‘বড় কাজ’ পেলে তো কপাল খুলে যায়। যেমন ভুয়া নাম-ঠিকানায় জাল পাসপোর্ট তৈরি, আঙ্গুলের ছাপ জালিয়াতি (মিসফিঙ্গারিং) ইত্যাদি কাজে লাখ টাকারও বেশি আয় করা যায়।
এ বিষয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু দাবি করেন, ‘দালাল নির্মূলে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য র্যাব-পুলিশের সহায়তায় মাঝেমধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হয়। আগের তুলনায় বর্তমানে কিছুটা হলেও দালাদের দৌরাত্ম্য কম।’
আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের দক্ষিণ পাশে মূলত এই বাজারই পাসপোর্ট দালালদের হাট বলে পরিচিত।
এখানকার শতাধিক দোকানে দিনভর চলছে আজব এই ঘুস কমিশন ও জালজালিয়াতির কারবার। বেশিরভাগ দোকানে লোক দেখানোর জন্য রাখা আছে অকেজো কম্পিউটার এবং ফটোকপি মেশিন। সারাক্ষণ এখানে দালালদের প্রকাশ্য হাঁকডাক। কোনো আগন্তুক সামনে এলেই তারা সমস্বরে বলে ওঠেন, ‘কী কাজ ভাই? আসেন, বসেন। করে দিব। টাকা কম লাগবে। ইত্যাদি।’
সূত্র বলছে, এভাবে পাসপোর্ট দালালির সুবাদে অনেকেই এখন অঢেল সম্পদের মালিক। আগারগাঁওকেন্দ্রিক কোটিপতি পাসপোর্ট দালালদের মধ্যে অন্যতম চাঁদপুরের বাসিন্দা আব্দুল কাদের। তিনি আগে সোনালী ব্যাংকের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছিলেন। কর্মকর্তাদের ফুটফরমাসও খাটতেন। এক পর্যায়ে এখানে দালালের খাতায় নাম লেখান। কিছুদিন না যেতেই তার ভাগ্যের চাকা খুলে যায় ।
Leave a Reply